নিজেস্ব প্রতিবেদক
সিটি করপোরেশন তফসিলে প্রণীত আইন লঙ্ঘন করে ঢাকা দক্ষিন সিটি করপোরেশনে (ডিএসসিসি) পদোন্নতি (অতিরিক্ত দায়িত্ব) দেয়ার হিড়িক চলছে। ৩৮জন কর্মকর্তা কর্মচারীকে প্রথম শ্রেনীর উপ কর কর্মকর্তা ( ডিটিও) পদে ওই পদোন্নতি দেওয়া হবে। এ সংক্রান্ত অফিস আদেশের চিঠি হওয়ার অপেক্ষায় রয়েছে। সিনিয়র ও যোগ্যতা সম্পন্ন কর্মচারীদের পাশ কাটিয়ে ওই পদের জন্য প্রয়োজনীয় শিক্ষাগত যোগ্যতা না থাকা সত্বেও এ দায়িত্ব দেওয়া হচ্ছে বলে অভিযোগ করেছেন ক্ষুব্ধ হয়ে উঠা বঞ্চিত কর্মকর্তা-কর্মচারীরা।
সূত্র জানায়, দেশজুড়ে মহামারী করোনা ভাইরাসের প্রাদুর্ভাবের মধ্যে বর্তমান মেয়রের শেষ সময় এসে তড়িঘড়ি করে ডিএসসিসিতে উপ-কর কর্মকর্তা পদে ৩১ জন ও কর কর্মকর্তা পদে ৭ জনকে অতিরিক্ত দায়িত্ব দেয়া হচ্ছে। তবে এ দায়িত্ব বন্টনে ডিএসসিসি’র জন্য প্রণীত তফসিল অনুসরণ করা হয়নি। ডিএসসিসির জন্য সর্বশেষ প্রণীত তফসিল -২০১৯ অনুযায়ী "কোন পদে কাউকে অতিরিক্ত বা চলতি দায়িত্ব প্রদান করতে হলে ওই পদের একধাপ নিছের কর্মকর্তাকে দায়িত্ব প্রদান করতে হবে। এবং ওই ক্ষেত্রে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তির ওই পদের জন্য প্রয়োজনীয় শিক্ষাগত যোগ্যতা ও জেষ্ঠ হতে হবে।" এ আইনের ব্যত্তয় ঘটিয়ে উপ কর কর্মকর্তা ( ডিটিও) পদের জন্য বি, এ পাশ নির্ধারিত থাকলেও উচ্চ মাধ্যমিক পাশ কর্মচারীদের এ পদে দায়িত্ব দেওয়া হচ্ছে। এদের মধ্যে ডিএসসিসি’র লাইসেন্স সুপারভাইজার ইফতেখার হোসেন, দৌলত হোসেন, আহাম্মদ হোসেন, রেভিনিউ সুপার ভাইজার সনয় কুমার পালসহ বেশ কয়েকজন উচ্চমাধ্যমিক পাশ কর্মচারীকে ১ম শ্রেণীর কর্মকর্তা পদে দায়িত্ব দেওয়া হচ্ছে। অনুমদিত ওই নথির স্বারক নম্বর- ৪৬.২০৭.০০০.১০.০১.০৮৮১.২০১৯ তারিখ ১৯.১২.২০১৯। ওই নথিতে অপেক্ষাকৃত দুই গ্রেড নিচু পদের কর্মাচারীকে অতিরিক্ত দায়িত্বের নামে সাময়িক পদোন্নতি দেওয়া হয়েছে। বঞ্চিত ও সংক্ষুব্ধ অনেকে এই আদেশ বাতিলের জন্য ঐক্যবদ্ধভাবে দরখাস্ত করা ও কঠোর আন্দোলন গড়ে তুলবেন বলে জানা গেছে।
পদোন্নতি বলার কারণ হিসেবে সংক্ষুব্ধরা বলছেন, ডিএসসিসিতে সিনিয়র ও অধিক যোগ্যতা সম্পন্ন অসংখ্য কর্মচারী দীর্ঘ দেড় যুগেরও বেশি সময় নিয়মিত পদোন্নতি বঞ্চিত হয়েছেন। তাই বিগত দিনে যাদের অতিরিক্ত দায়িত্বের নামে পদোন্নতি দেওয়া হয়েছে; তাদের ওই পদ থেকে কখনো অপসারণ করা হয়নি। উপরন্তু একই ব্যক্তি ৩ বা ততোধিক উচ্চ পদে অতিরিক্ত দায়িত্বে থাকার নজিরও রয়েছে সংস্থাটিতে। এছাড়া এসব বয়োজেষ্ঠ ও দক্ষ কর্মীদের বাদ দিয়ে কনিষ্ঠ ও দুর্নীতিবাজ কর্মচারীদের তড়িঘড়ি করে গোপনে আদেশ জারির অপেক্ষাকে কতৃপক্ষের প্রহসন হিসেবে আখ্যায়িত করেছেন অনেকে। এ আদেশের চিঠি দ্রুত প্রণয়ন করতে সংস্থাপনের কর্মকর্তাদের চাপ প্রয়োগ করছেন একটি চক্র।
এদের মধ্যে তালিকায় প্রথমে থাকা মো: ইফতেখার হোসেনের সঙ্গে এ প্রতিবেদক মোবাইল ফোনে জানতে চাইলে তিনি সংস্থাপন শাখার সহকারী-সচিবকে হুমকী দেয়ার বিষয়টি অস্বীকার করেন। উপ-কর কর্মকর্তা হিসেবে নিজেকে যোগ্য মনে করেন কি-না, এমন প্রশ্নে তিনি সরাসরি বলেন, না আমি তা মনে করি না।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে রাজস্ব বিভাগের একজন কর্মকর্তা জানান, বর্তমান মেয়রের শেষ সময়ে এসে একটি মহল লুটপাটে বেসামাল হয়ে পড়েছে। এরই অংশ হিসেবে বিশাল অঙ্কের ঘুষ লেনদেনের মাধ্যমে ৭ জনকে কর কর্মকর্তা ও উপ-কর কর্মকর্তা পদে ৩১ জনকে অতিরিক্ত দায়িত্ব দেয়া হচ্ছে। তিনি বলেন, জন প্রতি ৩ থেকে ৫ লাখ টাকা উৎকোচ নিয়ে এসব দায়িত্ব দেয়ার পাশাপাশি কিছুদিন পর এসব পদই তাদের মূল পদ করে দিবেন বলে আশ্বস্ত করেছেন এ চক্রের মূল হোতা রাজস্ব বিভাগের উর্ধ্বতন এক কর্মকর্তা। এমনকি নতুন মেয়র যোগদানের পর তাদের এসব পদ থেকে অপসারন করতে চাইলে আদালতের মাধ্যমে তা স্থগিতাদেশ করা যাবে বলে এ জাতীয় দু’একটি দৃষ্টান্ত তুলে ধরেন রাজস্ব শাখার ওই উর্ধ্বতন কর্মকর্তা।ডিএসসিসি’র অন্য এক কর্মকর্তা বলেন, বিষয়টি যদিও আমার এখতিয়ারভুক্ত নয়, তবে আমি শুনেছি সম্পূর্ন অন্যায়ভাবে এ দায়িত্ব দেয়া হচ্ছে। এতে ডিএসসিসি’র চাকরি বিধিমালা, তফসিল কিংবা আইন কোনো কিছুরই তোয়াক্কা করা হয়নি । এমনকি সাচিবিক দপ্তরকে পাশ কাটিয়ে রাজস্ব কর্মকর্তা যে কাজ করেছেন তা শুধু বেঅইনীই নয় অন্যায়ও। যদিও পূর্ব থেকেই তিনি এসব ব্যাপারে সিদ্ধহস্ত। তবে সংস্থার সিইও যদি এসব ব্যপারকে প্রশ্রয় দেন তাহলে সাধারণ কর্মকর্তা-কর্মচারীদের কিছুই করার থাকে না। এর ফলে ক্রমান্বয়ে এক পর্যায়ে সংস্থার শৃঙ্খলা ভেঙ্গে পড়বে বলেও জানান তিনি।
ডিএসসিসি’র সচিব মো: মোস্তফা কামাল মজুমদারের সঙ্গে মোবাইল ফোনে একাধিকবার যোগাযোগের চেষ্টা করলে তিনি ফোন রিসিভ করেননি।ডিএসসিসি’র প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা শাহ মো: ইমদাদুল হকের সঙ্গেও এ বিষয়ে মোবাইল ফোনে যোগাযোগের চেষ্টা করলে একাধিকবার তিনি ফোনের সংযোগ বিচ্ছিন্ন করে দেন। পরবর্তিতে তাকে এ সংক্রান্ত প্রশ্ন সম্বলিত ক্ষুদে বার্তা পাঠানো হলেও তিনি কোনো উত্তর দেননি।